দেশে আসা যাওয়ার করার সুবাদে দুবাই বিমান
বন্দরটা আমার একটা পরিচিত স্থান ।
কিন্তু এই ভ্রমনটা ছিল একটু অন্য রকম।
জিবনের প্রথম কোন অভিবাবক ছাড়া একলা একলা
দেশ থেকে ইতালিতে ফিরে আসা
দেশের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় একজনের সাথে পরিচয় হয় আমার।নাম তার "আনিতা"
১৬ বছর বয়সের মিষ্টি একটা কিশোরি(বরাবর ই আমি দেশি মেয়েদের প্রতি একটু দুর্বল) ,সেও এই প্রথম একা একা ইউকে যাচ্ছে।
আমার বলল "তুমি কই যাবা?"
আমিঃ ইতালি।
আনিতাঃ তোমার ট্রানজিট কই ?
আমিঃ দুবাই।
আনিতাঃআমরও দুবাই কিন্তু আমি ইউকে যাচ্ছি।
আমি কথা একটু কমই বলছিলাম কেননা "রস" থেকে সদ্য কেনা
আমার মিষ্টির পেকেট থেকে টুপ টুপ
করে রস পড়ছিল।
মনে মনে দোকানিকে ১০১ টা অভিশাপ দিলাম।
কিছু ক্ষণ পর খিয়াল করলাম মেয়েটি লাইন থেকে চলে গেছে ।
ভাবলাম মনে হই আগে ভাগেই চলে গেছে ।
কিন্তু আমার ডকোমেন্ট শেষবারের মত চেকাপ করার সময় মেয়েটই এসে বলল
"যাক শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল ।"
আমিঃ কি পাওয়া গেল?
আনিতাঃবোর্ডিং কার্ড।
আমিঃ মানে তুমি কি বোর্ডিং কার্ড ভুলে রেখে এসে ছিলে নাকি?
আনিতাঃআরে না । আমি অনেক রিকুয়েস্ট করে এক আঙ্কেল
এর সাথে আমারটা চেঞ্জ করে নিয়ে এসেছি।
আমিঃকেন?
আনিতাঃকারন আমার সিটটা তোমারটার চেয়ে অনেক দূরে ছিল ।
আমি পালটিয়ে তোমার সাথের সিটের কার্ড নিয়ে এসছি।
আমি উঁচু গলাই বলে উঠলাম"খাইছে মোরে "।
বুঝতে পারলাম আজ আর নিস্তার নেয় সারাটা রাস্তা আজ আমার খবর আছে ।
বিমান উঠার আগ পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক ছিল কিন্তু
সিটে বসা মাত্র বকার বক শুরু হল।
আমি কি করি ?
দেশে কেন?
একা যাচ্ছি কেন? ব্লা ব্লা
আমি হ্যাঁ না দিয়ে উওর দিচ্ছিলাম।
বিমান ফ্লাই করার আগে আনিতা বলল "আমি বিমান উপরে উঠার সময় অনেক ভয় পাই "
তাহলে চোখ বন্ধ করে হাটিম মাটিম ছড়াটা আবৃতি কর দেখবে আর ভয় লাগবে না ।
আমিত এই ছড়া পারি না ।
:O আমার সন্দেহ হল যে মেয়েটা আমাকে নিয়ে এক ধরনের মজা করছে ।
আমিঃতুমি ইউকেতে কোথায় থাক ?
আনিতাঃ মেঞ্চেস্টার।
আমিঃ কি কর?
আনিতাঃ পড়া লিখা।
আমিঃ কত দিন ধরে থাক ?আর দেশে কেন এসেছ?
আনিতাঃআমার জন্ম ইউকেতে ।আর আমি এই দেশের শীত কাল দেখতে এসেছি।
আমিঃ কেমন লাগল শীত কাল ? আর হে তুমি এত ভাল বাংলা বল কি করে?
আনিতাঃহুম অনেক ভাল লাগছে।আমার কাকু,মা আর মামা সব সময় বাংলাই কথা বলে,তাই আমিও বাংলা বলতে পারি ।
তুমিত দেখি অনেক বেশি কথাই বল,তাইতে এত ক্ষণ চুপ কইরা ছিলা কেন?
পুরাই টাশকি খাইলাম । এই মেয়ে দেখি ভয়ানক পাপী :/
বিমানের ভিতর আমার কলিজাটারে জ্বালাইয়া দিছে মেয়েটা।
দুবাই বিমান লেন্ড করার পর হ্যান্ড লাগেজ নামানোর সময়
আবিষ্কার করলাম আমার শখের মিস্টির রস
আনিতার জেকেটের এক সাইড শেষ করে দিছে।
মেয়েটা আমার উপর ভীষণ রাগান্নিত হল।
আমি কি করুম ?অপরাধত আমারই ।
কিন্তু মেয়েটা তেমন কিছুই বলল না,
খালি ঘেনর ঘেনর করতে লাগল।
আমি আনিতাকে বাংলার সেই বিখ্যাত রসগোল্লা গল্পটা শুনালাম ,আর নিজেকে উপস্থাপন করলাম অনেকটা ঝন্টুদার মত করে।
গল্প শুনার পর মেয়েটা হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়ে।
আমি তাকে কোন রকম টেনে হেঁচড়ে উঠালাম।
দুবাইতে আমার ছিল ১২ ঘন্টা ট্রানজিট
আর ওর ছিল ৯ ঘন্টার, আমি মনে প্রানে চাইছিলাম
যাতে আমি তার কাছ থেকে আগে ভাগে কেটে পরতে পারি ।
কিন্তু তা আর পারলাম না ।
কেননা একই গেট নাম্বার দিয়ে আমাদের প্রবেশ পথ।
তবে একটু পরে মনে হল খারাপ কি ?
সময়টা তো অনেক ভালই কাটছে বরং বাকি সময়টাও মজা করে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
ঘন্টা খানেক চুটিয়ে আড্ডা দেওয়ার পর শুরু হয়ে গেল প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।
এই হল আমার আরেক ঝামেলা,সন্ধ্যা বেলা এক মগ চা না হলে যেন আর সয় না ।
বাধ্য হয়ে পকেটের ৯ ইউরো দিয়ে ২ মগ কফি কিনলাম (দুধের সাধ গুলে মেটনো আর কি)।
তাহসান ভাইয়ের ইচ্ছা গান শুনতে শুনতে দুইজনে কফি শেষ করলাম।
পিসিতে "স্টেপ আপ" নামের একটা মুভি দেখলাম ।
এক ক্ষণ চুপ করে থাকা আনিতা হটাৎ করে চেচিয়ে উঠল "আমার খিদা লাগছে"।
আমি আমার বোর্ডিং কার্ড তার হাতে দিয়ে বললাম "যাও খিদা লাগলে খাবারের টোকেনটা নিয়া আস ,আর তুমি যেহেতু যাবা আমার টা ও নিয়া আস।"
এই মেয়ে আর ৮/১০ জনের মত না, সে একলা যাবে না আমাকেও তার সাথে গিয়ে ৩০ মিনিটের এর বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট নিতে হল।
রাতের ডীনার করার ইচ্ছা ছিল বাঙ্গালি স্টাইলে,কিন্তু তার জন্য আমাকে mcdonalse
এর ভাজা পুড়া খাবার দিয়ে ডিনার করতে হল।
৮ ঘন্টা সময় যে কেমন করে চলে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না।
হইত তখন সময়টা ছিল বিদায় নিবার ,কিন্তু যে আমি এতটা সময় মেয়েটার কাছ থেকে পালাইতে চেয়েছিলাম
সেই আমি তাকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম
যতটা পথ পর্যন্ত আমার যাওয়ার অনুমতি ছিল।
লাস্ট গেটে এসে আনিতা বলল "অনেক ভাল সময় কাটল,আমি যাই!তুমি ভাল থেক ।"
হুম তুমি ও ভাল থেক ।
আমি পিছন দিকে হাটতে শুরু করলাম ,আমি কোন সময় কারো কাছে বিদায় নেওয়ার পর পেছন ফিরে তাকায় না এই বার ও তাকালাম না। (হিমু থেকে শিক্ষা নেওয়া)
কিন্তু এর পরের তিন ঘন্টা ২ টা প্রশ্ন আমার মাথাই বিরামহীন ভাবে ঘুরতে থাকে ।
* আমি কেন মেয়েটার ফোন নাম্বার চাইলাম না ?
* কেন ফেসবুক আইডি/ মেইল আইডিও নিলাম না ?
এখন ও মাঝে মাঝে আমি ফেসবুকে আনিতা নামের কোন প্রফাইল পেলে ভাল করে দেখি
এই কি ,সেই আনিতা?যার সাথে ১ টা দিন কাটিয়ে ছিলাম অনেক মজা করে?
সেও কি মনে হই আমাকে খোঁজে? না আমার কথা তার মনেই নেই ?
বিঃদ্রিঃ- কেউ আবার ভাববেন না আমি মেয়ে টার প্রেমে পরেছি। প্রেম এত সস্তা না । আর এইটা ও কোন সিনামার কাহিনি না আমার একটা ছোট্টো ভ্রমন কাহিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন