শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৩

নষ্ট ভালোবাসা অতঃপর নতুন একটা পথশিশু জন্ম !


  1. একটা গল্প শুনবা? গল্প !
    কিছু দিন পর তৈরি হতে যাওয়া নতুন একটা পথশিশুর গল্প?

    আমার ছোট বেলার একটা বান্ধুবী অনু {ছদ্ম নাম}।
    দেখতে মিষ্টি , বুদ্ধিমতি বাপের পয়সাও মাশাল্লাহ ।
    আচ্ছা তাকে কি বান্ধুবী বলা যায়? নাকি শুধু ক্লাসমেট ?
    তাও তখন আমাদের বয়সইবা কত ?
     ৮/৯ হবে ।
    ক্লাস ৪ শেষ করে চলে এলাম শহরে ,তার পর দেশ ছেড়ে চলে এলাম স্বপ্নের এক দেশে । 

    তবুও মাঝে মাঝে তার কথা মনে হত ,স্কুল ,বন্ধু আর তার সাথে মনে হত ...একটা নাম অনু ।

    আমি তখন ইতালিতে ,

    এক সকালে আম্মা এসে কঠিন শুরে বলল ‘ঐ তোরা আস্তে আস্তে সব কিছু গোছাতে শুরু কর,আগামী মাসেই আমারা দেশে যাচ্ছি । দেশের পড়ালেখাও কিছুটা করা দরকার 
    না হলে দেশ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবি না’ ।

    আমিত মহা খুশী দেশে যাব ,এইবার ভাল করেই মজা করা যাবে । কিন্তু পড়ালেখার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল ।
    মহা আনন্দে কোন এক সালের ফেব্রুয়ারিতে নাচতে নাচতে চলে গেলাম নিজ দেশে ।
    স্কুলে ভর্তি হলাম ,ক্লাস শুরু করলাম সবকিছুই ঠিক ঠাক চলতে লাগল।
    এত গুলি পুরাতন বন্ধু পেয়ে সব সময় টুইটুই করে ঘোরতাম এখনে সেখনে ।

    একদিন বন্ধুদের বললাম ‘চল সবাই মিলে মেলা থেকে ঘুরে আসি। বিরাট মেলা দোস্ত , মাজার শরীফের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫ দিন এক টানা মেলা হবে’।
    সন্ধ্যা বেলা সব বন্ধুরা মিলে মেলায় গেলাম ,
    কারন ঐ মেলাই সন্ধ্যার দিকে নাচের আসর জমে ,নাচ দেখা শেষ করে বাসাই যাব
    এমন সময় দেখতে পেলাম পরিচিত একটা চেহারা, সেই “অনু” !

    কিন্তু আমি তার কাছে গেলাম না ,এই রকম একটা গ্রামের মেলাতে সে
    যেই ধরনের ড্রেস আপ করছে দেখতেই খারাপ লাগছে।
    আর আশে পাশের ছেলেগুলি যেন তাকে চোখ দিয়ে খুটে খুটে খাচ্ছিল ,খুবিই লজ্জা জনক অবস্থা । মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে গেল আমার ।
    ঐদিনই প্রথম আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলাম ‘অনু এত দিন লন্ডন ছিল ।
    কিছু দিন আগেই দেশে এসেছে ছুটিতে’।

    ৩/৪ মাস পরে,
    জানতে পারলাম অনু কোন এক ছেলেকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছে।
    শুনতে পেয়ে আমার কেমন জানি হাসি পেল ।
    ক্লাস ৮ এর একটা মেয়ে তার মা বাবার অনুমতি ছাড়াই
    নিম্নবিত্ত পরিবারের এক ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে ,যেই মেয়ে কিনা মাত্র কিছুদিন আগেই ইউরোপের একটা উন্নত দেশ থেকে এসেছে ছুটি কাটাতে।

    এই দুনিয়াই আমারা সবাই অনেক অদ্ভুত ,একজন একজনের চেয়ে অন্য রকম ।
    আর এমনটাত খুবি সাধারন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল।
    দেশে আমার কেন জানি লেখা পড়া করা হল না ।
    আবার হুট করে চলে আসলাম ইতালিতে ।
    ভুলে গেলাম আনুর কথা ,সব মনযোগ দিলাম পড়ালেখার প্রতি ।

    ২ বছর পর ,

    পেয়ে গেলাম বহু প্রতীক্ষিত সেই কলেজে উঠার সার্টিফিকেট।
    এর মাঝেই আমার আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল । সবাই মিলে অনেক দিন পর আবার দেশে গেলাম। দেশে যাওয়ার পর থেকেই আমার কাজ হয়ে দাঁড়াল সবার ঠিকানা খোঁজে খোঁজে তাদের সাথে দেখা করা ।
    সেই অনুসারে দেখা হয়ে গেল গেল শৈশবের এর বন্ধুর সাথে ।
    তার কাছ থেকে পেয়ে গেলাম অনুর ফেসবুক আইডি।
    আমি তাকে সাথে সাথে রিকোয়েস্ট পাঠালাম । রাতে ফেসবুক ওপেন করে দেখলাম রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেছে।

    শুরু হল চ্যাটিং , তারপর স্কাইপ । অনুর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলল
    ‘আমি এখই ইউ কে থাকি, সানি{তার স্বামী} দেশে আছে ।
    আমাদের একটা মেয়ে আছে তার বয়স ৯ মাস’।

    কথার এই পর্যায়ে এসে আমার তাকে থামিয়ে দিলাম ।
    আমিঃতোর কি বেবি আছে নাকি?
    অনুঃহুম ! আছে ।
    আমিঃতাইলে তুই ইউকে তে কি করিস?
    আনুঃআমি তাকে রেখেই চলে এসেছি ।
    আমিঃতার মানে কি? সানির সাথে তোর ডিভোর্স হয়ে গেছে?
    অনুঃ না । তবে হবে হবে করছে।
    আমিঃকত দিন আগে গিয়েছিস ইউকেতে?
    অনুঃ ৬ মাস আগে ।
    আমিঃতখন তোর মেয়ের বয়স কতছিল? ২ মাস? কেন বিয়ে করছিলি
    আর কেনই বা চলে গেলি?
    অনুঃসানির সাথে আমার মিলছে না আর ঐ দিকে আমা
    র ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসছিল তাই ।
    আমিঃ তাই বলে একটা দুধের বাচ্চাকে রেখে তুই চলে আসবি?
    অনু আর তেমন কোন কথা বলল না ।
    আমি অনুর কাছ থেকে তার স্বামীর মোবাইল নাম্বার নিলাম ,তার পর ফোন দিয়ে পোঁছে গেলাম তাদের বাড়িতে।মনে একটা ইচ্ছা জাগছিল দেখার জন্য
    মা ছাড়া একটা ২ মাসের বাচ্চা কি করে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে
    আর কেমন অবস্থাই আছে।

    সানিদের বাড়ীতে গিয়ে আমি যা দেখলাম ও জানলাম তা হল
    ‘নোংড়া একটা বস্তিতে তাদের বাড়ী । এই বাচ্চার দেখা শুনা করেছে বাচ্চার দাদী ।
    সানি এখন একটা মোবাইল সার্ভিস এর দোকানে কাজ করে ,যে টাকা পকেটে আসে তার অর্ধেক চলে যায় তার নেশা করার জন্যে।
    সানি সিধান্ত নিয়েছে কিছুদিনের ভিতরেই ডিভোর্সের কাজটা শেষ করে ফেলবে সে’।

    আমি জানতে চাইলাম তার মেয়ে সাওদার কি হবে?

    খুব সহজ ভাবে হেসেই বলে দিল “ভাই আমি সারাদিন নেশা পানি করি 
    মাথার কোন ঠিক নায় , কি আর হইব? 
    রাস্তাই রাস্তাই থাকব লাত্থি গুতা খাইয়া বড় হইব”।

    আমি আর কথা বলতে পারছিলাম না ,শরীর টা কেমন জানি গুলিয়ে আসছিল ।
    লাফ দিয়ে একটা রিক্সাই উঠে যাই আমি , রিক্সার চালকেরও কোন ভাবান্তর হল না,
    সে আপন মনে চালিয়ে যাচ্ছে । 

    আমি ঠাণ্ডা বাতাসে খোলা রিক্সাই বসে বসে ভাবছি “অনু হইত বুঝতে পারল এই ভাবে ফকিরের মত বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না তাই সে তার মা বাবার হাত ধরে
    হাওয়াই জাহাজে করে পাড়ী জিমিয়েছে তার আপন গন্তব্যে।

    সানির চিন্তা এখন নতুন আরেকটা সংসার ।
    আর তাদের নষ্ট ভালবাসার বৈধ সন্তান সাওদা, সে এখোন জানে না পৃথিবীর কতটুকু নিষ্ঠুরতা তার জন্য পথচেয়ে বসে আছে”।

    আমি চমকে ঊঠালাম !
     রিক্সাওলা বিরস মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
    কি হইছে মামা? কই যাইবেন ?
    যাও যেখানে ইচ্ছা যাও ।
    আমি জানি সে এখন ক্লান্তহীন ভাবে প্যাডেল মারবে আর আমি উদাস ভঙ্গিতে মনের ভিতর নানা রকমের আঁকা আঁকি করব।

    কিছু কথাঃ ভালবাসা ব্যাপারটা কি পানি ভাত?এইটা কি ভালবাসা? আবেগ দিয়েত আর জীবন চলে না । হাটুর বয়সের ছেলে-মেয়ে গুলি পরিবারেব অমতে বিয়ে করে ,বিয়ের পরেই বাচ্চা আর তার পরেই ছাড়া ছাড়ি।
    ফলাফলঃ- নাম ঠিকানহীন নতুন আরেকটা 
    পথশিশুর জন্ম । সমাজে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকতে না পের ভুল পথে পা বাড়ানো আর বেড়ে উঠা আর কিছু বিপথগামী মানুষ 
    1. {কল্পকাহিনী মনে করবেন না । এইটা একটা সত্যি ঘটনা }
      নষ্ট কাক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন