- একটা গল্প শুনবা? গল্প !
কিছু দিন পর তৈরি হতে যাওয়া নতুন একটা পথশিশুর গল্প?
।
আমার ছোট বেলার একটা বান্ধুবী অনু {ছদ্ম নাম}।
দেখতে মিষ্টি , বুদ্ধিমতি বাপের পয়সাও মাশাল্লাহ ।
আচ্ছা তাকে কি বান্ধুবী বলা যায়? নাকি শুধু ক্লাসমেট ?
তাও তখন আমাদের বয়সইবা কত ?৮/৯ হবে ।
ক্লাস ৪ শেষ করে চলে এলাম শহরে ,তার পর দেশ ছেড়ে চলে এলাম স্বপ্নের এক দেশে ।তবুও মাঝে মাঝে তার কথা মনে হত ,স্কুল ,বন্ধু আর তার সাথে মনে হত ...একটা নাম অনু ।
।
আমি তখন ইতালিতে ,
এক সকালে আম্মা এসে কঠিন শুরে বলল ‘ঐ তোরা আস্তে আস্তে সব কিছু গোছাতে শুরু কর,আগামী মাসেই আমারা দেশে যাচ্ছি । দেশের পড়ালেখাও কিছুটা করা দরকারনা হলে দেশ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবি না’ ।
আমিত মহা খুশী দেশে যাব ,এইবার ভাল করেই মজা করা যাবে । কিন্তু পড়ালেখার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল ।মহা আনন্দে কোন এক সালের ফেব্রুয়ারিতে নাচতে নাচতে চলে গেলাম নিজ দেশে ।স্কুলে ভর্তি হলাম ,ক্লাস শুরু করলাম সবকিছুই ঠিক ঠাক চলতে লাগল।এত গুলি পুরাতন বন্ধু পেয়ে সব সময় টুইটুই করে ঘোরতাম এখনে সেখনে ।
একদিন বন্ধুদের বললাম ‘চল সবাই মিলে মেলা থেকে ঘুরে আসি। বিরাট মেলা দোস্ত , মাজার শরীফের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫ দিন এক টানা মেলা হবে’।
সন্ধ্যা বেলা সব বন্ধুরা মিলে মেলায় গেলাম ,কারন ঐ মেলাই সন্ধ্যার দিকে নাচের আসর জমে ,নাচ দেখা শেষ করে বাসাই যাব
এমন সময় দেখতে পেলাম পরিচিত একটা চেহারা, সেই “অনু” !
কিন্তু আমি তার কাছে গেলাম না ,এই রকম একটা গ্রামের মেলাতে সে
যেই ধরনের ড্রেস আপ করছে দেখতেই খারাপ লাগছে।
আর আশে পাশের ছেলেগুলি যেন তাকে চোখ দিয়ে খুটে খুটে খাচ্ছিল ,খুবিই লজ্জা জনক অবস্থা । মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে গেল আমার ।ঐদিনই প্রথম আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলাম ‘অনু এত দিন লন্ডন ছিল ।
কিছু দিন আগেই দেশে এসেছে ছুটিতে’।
।
৩/৪ মাস পরে,
জানতে পারলাম অনু কোন এক ছেলেকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছে।
শুনতে পেয়ে আমার কেমন জানি হাসি পেল ।
ক্লাস ৮ এর একটা মেয়ে তার মা বাবার অনুমতি ছাড়াই
নিম্নবিত্ত পরিবারের এক ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে ,যেই মেয়ে কিনা মাত্র কিছুদিন আগেই ইউরোপের একটা উন্নত দেশ থেকে এসেছে ছুটি কাটাতে।
এই দুনিয়াই আমারা সবাই অনেক অদ্ভুত ,একজন একজনের চেয়ে অন্য রকম ।
আর এমনটাত খুবি সাধারন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল।
দেশে আমার কেন জানি লেখা পড়া করা হল না ।
আবার হুট করে চলে আসলাম ইতালিতে ।
ভুলে গেলাম আনুর কথা ,সব মনযোগ দিলাম পড়ালেখার প্রতি ।
২ বছর পর ,
পেয়ে গেলাম বহু প্রতীক্ষিত সেই কলেজে উঠার সার্টিফিকেট।
এর মাঝেই আমার আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল । সবাই মিলে অনেক দিন পর আবার দেশে গেলাম। দেশে যাওয়ার পর থেকেই আমার কাজ হয়ে দাঁড়াল সবার ঠিকানা খোঁজে খোঁজে তাদের সাথে দেখা করা ।
সেই অনুসারে দেখা হয়ে গেল গেল শৈশবের এর বন্ধুর সাথে ।
তার কাছ থেকে পেয়ে গেলাম অনুর ফেসবুক আইডি।
আমি তাকে সাথে সাথে রিকোয়েস্ট পাঠালাম । রাতে ফেসবুক ওপেন করে দেখলাম রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেছে।
শুরু হল চ্যাটিং , তারপর স্কাইপ । অনুর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলল
‘আমি এখই ইউ কে থাকি, সানি{তার স্বামী} দেশে আছে ।
আমাদের একটা মেয়ে আছে তার বয়স ৯ মাস’।
কথার এই পর্যায়ে এসে আমার তাকে থামিয়ে দিলাম ।
আমিঃতোর কি বেবি আছে নাকি?
অনুঃহুম ! আছে ।
আমিঃতাইলে তুই ইউকে তে কি করিস?
আনুঃআমি তাকে রেখেই চলে এসেছি ।
আমিঃতার মানে কি? সানির সাথে তোর ডিভোর্স হয়ে গেছে?
অনুঃ না । তবে হবে হবে করছে।
আমিঃকত দিন আগে গিয়েছিস ইউকেতে?
অনুঃ ৬ মাস আগে ।
আমিঃতখন তোর মেয়ের বয়স কতছিল? ২ মাস? কেন বিয়ে করছিলি
আর কেনই বা চলে গেলি?
অনুঃসানির সাথে আমার মিলছে না আর ঐ দিকে আমা
র ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসছিল তাই ।
আমিঃ তাই বলে একটা দুধের বাচ্চাকে রেখে তুই চলে আসবি?
অনু আর তেমন কোন কথা বলল না ।
আমি অনুর কাছ থেকে তার স্বামীর মোবাইল নাম্বার নিলাম ,তার পর ফোন দিয়ে পোঁছে গেলাম তাদের বাড়িতে।মনে একটা ইচ্ছা জাগছিল দেখার জন্য
মা ছাড়া একটা ২ মাসের বাচ্চা কি করে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে
আর কেমন অবস্থাই আছে।
সানিদের বাড়ীতে গিয়ে আমি যা দেখলাম ও জানলাম তা হল
‘নোংড়া একটা বস্তিতে তাদের বাড়ী । এই বাচ্চার দেখা শুনা করেছে বাচ্চার দাদী ।
সানি এখন একটা মোবাইল সার্ভিস এর দোকানে কাজ করে ,যে টাকা পকেটে আসে তার অর্ধেক চলে যায় তার নেশা করার জন্যে।
সানি সিধান্ত নিয়েছে কিছুদিনের ভিতরেই ডিভোর্সের কাজটা শেষ করে ফেলবে সে’।
আমি জানতে চাইলাম তার মেয়ে সাওদার কি হবে?
খুব সহজ ভাবে হেসেই বলে দিল “ভাই আমি সারাদিন নেশা পানি করিমাথার কোন ঠিক নায় , কি আর হইব?রাস্তাই রাস্তাই থাকব লাত্থি গুতা খাইয়া বড় হইব”।
আমি আর কথা বলতে পারছিলাম না ,শরীর টা কেমন জানি গুলিয়ে আসছিল ।
লাফ দিয়ে একটা রিক্সাই উঠে যাই আমি , রিক্সার চালকেরও কোন ভাবান্তর হল না,
সে আপন মনে চালিয়ে যাচ্ছে ।
আমি ঠাণ্ডা বাতাসে খোলা রিক্সাই বসে বসে ভাবছি “অনু হইত বুঝতে পারল এই ভাবে ফকিরের মত বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না তাই সে তার মা বাবার হাত ধরে
হাওয়াই জাহাজে করে পাড়ী জিমিয়েছে তার আপন গন্তব্যে।
সানির চিন্তা এখন নতুন আরেকটা সংসার ।
আর তাদের নষ্ট ভালবাসার বৈধ সন্তান সাওদা, সে এখোন জানে না পৃথিবীর কতটুকু নিষ্ঠুরতা তার জন্য পথচেয়ে বসে আছে”।
আমি চমকে ঊঠালাম !রিক্সাওলা বিরস মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
কি হইছে মামা? কই যাইবেন ?
যাও যেখানে ইচ্ছা যাও ।
আমি জানি সে এখন ক্লান্তহীন ভাবে প্যাডেল মারবে আর আমি উদাস ভঙ্গিতে মনের ভিতর নানা রকমের আঁকা আঁকি করব।
কিছু কথাঃ ভালবাসা ব্যাপারটা কি পানি ভাত?এইটা কি ভালবাসা? আবেগ দিয়েত আর জীবন চলে না । হাটুর বয়সের ছেলে-মেয়ে গুলি পরিবারেব অমতে বিয়ে করে ,বিয়ের পরেই বাচ্চা আর তার পরেই ছাড়া ছাড়ি।
ফলাফলঃ- নাম ঠিকানহীন নতুন আরেকটা পথশিশুর জন্ম । সমাজে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকতে না পের ভুল পথে পা বাড়ানো আর বেড়ে উঠা আর কিছু বিপথগামী মানুষ- {কল্পকাহিনী মনে করবেন না । এইটা একটা সত্যি ঘটনা }
নষ্ট কাক
শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৩
নষ্ট ভালোবাসা অতঃপর নতুন একটা পথশিশু জন্ম !
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩
এইটাই কি ভালবাসা ?
আমি বাচ্চা একটা পুলা,নিতান্তই ভালবাসা বুঝার মত বয়স আমার হয় নাই।
ভালবাসা বুঝার জন্য বয়স কত হওয়া লাগে?
।
আজ আমার একটা বান্ধবি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ,যাওয়ার আগের সময়টা পর্যন্ত সে আমার বাসাই ছিল।
নিয়ম অনুসারে তার মনটা খারাপ ছিল,আর আমি আর ৮/১০ দিনের মত আজ ও তার সাথে অনেক দুষ্টামি করলাম ।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ভাবনা আমাকে বলল "can i hug u?" ♥
আমি তারে জড়াইয়া ধরলাম,ভাবনা বলল "তোর কি মন খারাপ হচ্ছে ,আমার জন্য?"
-না ।
বাসার দরজা খুলে সিড়ি দিয়ে খুব আস্তে আস্তে দুইজন নিচে নামলাম।
গেট খুলে দিয়ে বললাম, "যা পরে দেখা হবে ।।"
ভাবনাঃ কোন সময় দেখা হবে?
আমিঃ হবে কোন একদিন। যা যা সন্ধ্যা হইছে বাসাই যা।
ভাবনাঃ আমার যেতে ইচ্ছা করছেনা।
আমিঃতাইকে কি করবি ?
আমার কথা শেষ হবার আগেই ভাবনা আবার ঝাপিয়ে পড়ল আমার উপর।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম ও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে ।
অনেকটা সময় পর্যন্ত এভাবেই দাড়িয়ে ছিলাম সিড়ির নিচের খুপড়ি জায়গাটাই , আমি তার গালের উপরের কাজল মিশ্রিত পানি মুছে দিয়ে বললাম "ভাল থাকিস । "
ভাবনা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল ।
আচ্ছা তখন তো আমি একফোটাও কাঁদিনি ,মন ও খারাপ হয়নি।
বরং মনে হচ্ছিল এইটাইত নিয়ম । চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ।
কিন্তু এখন আমি আমার অন্ধকার রুম থেকে বাহিরে বের হতে পারছি না ,কেননা আমি চায় না আমার শুকনা মুখ আর ফুলে উঠা চোখ অন্যকেউ দেখে ফেলুক :( ।
এইটাই কি ভালবাসা ?
মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৩
একটা ভ্রমন কাহিনী কিংবা অন্য কিছু ।
দেশে আসা যাওয়ার করার সুবাদে দুবাই বিমান
বন্দরটা আমার একটা পরিচিত স্থান ।
কিন্তু এই ভ্রমনটা ছিল একটু অন্য রকম।
জিবনের প্রথম কোন অভিবাবক ছাড়া একলা একলা
দেশ থেকে ইতালিতে ফিরে আসা
দেশের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় একজনের সাথে পরিচয় হয় আমার।নাম তার "আনিতা"
১৬ বছর বয়সের মিষ্টি একটা কিশোরি(বরাবর ই আমি দেশি মেয়েদের প্রতি একটু দুর্বল) ,সেও এই প্রথম একা একা ইউকে যাচ্ছে।
আমার বলল "তুমি কই যাবা?"
আমিঃ ইতালি।
আনিতাঃ তোমার ট্রানজিট কই ?
আমিঃ দুবাই।
আনিতাঃআমরও দুবাই কিন্তু আমি ইউকে যাচ্ছি।
আমি কথা একটু কমই বলছিলাম কেননা "রস" থেকে সদ্য কেনা
আমার মিষ্টির পেকেট থেকে টুপ টুপ
করে রস পড়ছিল।
মনে মনে দোকানিকে ১০১ টা অভিশাপ দিলাম।
কিছু ক্ষণ পর খিয়াল করলাম মেয়েটি লাইন থেকে চলে গেছে ।
ভাবলাম মনে হই আগে ভাগেই চলে গেছে ।
কিন্তু আমার ডকোমেন্ট শেষবারের মত চেকাপ করার সময় মেয়েটই এসে বলল
"যাক শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল ।"
আমিঃ কি পাওয়া গেল?
আনিতাঃবোর্ডিং কার্ড।
আমিঃ মানে তুমি কি বোর্ডিং কার্ড ভুলে রেখে এসে ছিলে নাকি?
আনিতাঃআরে না । আমি অনেক রিকুয়েস্ট করে এক আঙ্কেল
এর সাথে আমারটা চেঞ্জ করে নিয়ে এসেছি।
আমিঃকেন?
আনিতাঃকারন আমার সিটটা তোমারটার চেয়ে অনেক দূরে ছিল ।
আমি পালটিয়ে তোমার সাথের সিটের কার্ড নিয়ে এসছি।
আমি উঁচু গলাই বলে উঠলাম"খাইছে মোরে "।
বুঝতে পারলাম আজ আর নিস্তার নেয় সারাটা রাস্তা আজ আমার খবর আছে ।
বিমান উঠার আগ পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক ছিল কিন্তু
সিটে বসা মাত্র বকার বক শুরু হল।
আমি কি করি ?
দেশে কেন?
একা যাচ্ছি কেন? ব্লা ব্লা
আমি হ্যাঁ না দিয়ে উওর দিচ্ছিলাম।
বিমান ফ্লাই করার আগে আনিতা বলল "আমি বিমান উপরে উঠার সময় অনেক ভয় পাই "
তাহলে চোখ বন্ধ করে হাটিম মাটিম ছড়াটা আবৃতি কর দেখবে আর ভয় লাগবে না ।
আমিত এই ছড়া পারি না ।
:O আমার সন্দেহ হল যে মেয়েটা আমাকে নিয়ে এক ধরনের মজা করছে ।
আমিঃতুমি ইউকেতে কোথায় থাক ?
আনিতাঃ মেঞ্চেস্টার।
আমিঃ কি কর?
আনিতাঃ পড়া লিখা।
আমিঃ কত দিন ধরে থাক ?আর দেশে কেন এসেছ?
আনিতাঃআমার জন্ম ইউকেতে ।আর আমি এই দেশের শীত কাল দেখতে এসেছি।
আমিঃ কেমন লাগল শীত কাল ? আর হে তুমি এত ভাল বাংলা বল কি করে?
আনিতাঃহুম অনেক ভাল লাগছে।আমার কাকু,মা আর মামা সব সময় বাংলাই কথা বলে,তাই আমিও বাংলা বলতে পারি ।
তুমিত দেখি অনেক বেশি কথাই বল,তাইতে এত ক্ষণ চুপ কইরা ছিলা কেন?
পুরাই টাশকি খাইলাম । এই মেয়ে দেখি ভয়ানক পাপী :/
বিমানের ভিতর আমার কলিজাটারে জ্বালাইয়া দিছে মেয়েটা।
দুবাই বিমান লেন্ড করার পর হ্যান্ড লাগেজ নামানোর সময়
আবিষ্কার করলাম আমার শখের মিস্টির রস
আনিতার জেকেটের এক সাইড শেষ করে দিছে।
মেয়েটা আমার উপর ভীষণ রাগান্নিত হল।
আমি কি করুম ?অপরাধত আমারই ।
কিন্তু মেয়েটা তেমন কিছুই বলল না,
খালি ঘেনর ঘেনর করতে লাগল।
আমি আনিতাকে বাংলার সেই বিখ্যাত রসগোল্লা গল্পটা শুনালাম ,আর নিজেকে উপস্থাপন করলাম অনেকটা ঝন্টুদার মত করে।
গল্প শুনার পর মেয়েটা হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়ে।
আমি তাকে কোন রকম টেনে হেঁচড়ে উঠালাম।
দুবাইতে আমার ছিল ১২ ঘন্টা ট্রানজিট
আর ওর ছিল ৯ ঘন্টার, আমি মনে প্রানে চাইছিলাম
যাতে আমি তার কাছ থেকে আগে ভাগে কেটে পরতে পারি ।
কিন্তু তা আর পারলাম না ।
কেননা একই গেট নাম্বার দিয়ে আমাদের প্রবেশ পথ।
তবে একটু পরে মনে হল খারাপ কি ?
সময়টা তো অনেক ভালই কাটছে বরং বাকি সময়টাও মজা করে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
ঘন্টা খানেক চুটিয়ে আড্ডা দেওয়ার পর শুরু হয়ে গেল প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।
এই হল আমার আরেক ঝামেলা,সন্ধ্যা বেলা এক মগ চা না হলে যেন আর সয় না ।
বাধ্য হয়ে পকেটের ৯ ইউরো দিয়ে ২ মগ কফি কিনলাম (দুধের সাধ গুলে মেটনো আর কি)।
তাহসান ভাইয়ের ইচ্ছা গান শুনতে শুনতে দুইজনে কফি শেষ করলাম।
পিসিতে "স্টেপ আপ" নামের একটা মুভি দেখলাম ।
এক ক্ষণ চুপ করে থাকা আনিতা হটাৎ করে চেচিয়ে উঠল "আমার খিদা লাগছে"।
আমি আমার বোর্ডিং কার্ড তার হাতে দিয়ে বললাম "যাও খিদা লাগলে খাবারের টোকেনটা নিয়া আস ,আর তুমি যেহেতু যাবা আমার টা ও নিয়া আস।"
এই মেয়ে আর ৮/১০ জনের মত না, সে একলা যাবে না আমাকেও তার সাথে গিয়ে ৩০ মিনিটের এর বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট নিতে হল।
রাতের ডীনার করার ইচ্ছা ছিল বাঙ্গালি স্টাইলে,কিন্তু তার জন্য আমাকে mcdonalse
এর ভাজা পুড়া খাবার দিয়ে ডিনার করতে হল।
৮ ঘন্টা সময় যে কেমন করে চলে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না।
হইত তখন সময়টা ছিল বিদায় নিবার ,কিন্তু যে আমি এতটা সময় মেয়েটার কাছ থেকে পালাইতে চেয়েছিলাম
সেই আমি তাকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম
যতটা পথ পর্যন্ত আমার যাওয়ার অনুমতি ছিল।
লাস্ট গেটে এসে আনিতা বলল "অনেক ভাল সময় কাটল,আমি যাই!তুমি ভাল থেক ।"
হুম তুমি ও ভাল থেক ।
আমি পিছন দিকে হাটতে শুরু করলাম ,আমি কোন সময় কারো কাছে বিদায় নেওয়ার পর পেছন ফিরে তাকায় না এই বার ও তাকালাম না। (হিমু থেকে শিক্ষা নেওয়া)
কিন্তু এর পরের তিন ঘন্টা ২ টা প্রশ্ন আমার মাথাই বিরামহীন ভাবে ঘুরতে থাকে ।
* আমি কেন মেয়েটার ফোন নাম্বার চাইলাম না ?
* কেন ফেসবুক আইডি/ মেইল আইডিও নিলাম না ?
এখন ও মাঝে মাঝে আমি ফেসবুকে আনিতা নামের কোন প্রফাইল পেলে ভাল করে দেখি
এই কি ,সেই আনিতা?যার সাথে ১ টা দিন কাটিয়ে ছিলাম অনেক মজা করে?
সেও কি মনে হই আমাকে খোঁজে? না আমার কথা তার মনেই নেই ?
বিঃদ্রিঃ- কেউ আবার ভাববেন না আমি মেয়ে টার প্রেমে পরেছি। প্রেম এত সস্তা না । আর এইটা ও কোন সিনামার কাহিনি না আমার একটা ছোট্টো ভ্রমন কাহিনি।
ফেসবুকে "নষ্ট কাক"
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)